শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কার্যকরী উপায় জেনে নিন
প্রিয় পাঠক আপনি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কার্যকরী উপায় ও সেবা পেতে চাচ্ছেন? তাহলে আমাদের আজকের এই পোস্টে জানতে পারবেন শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কার্যকরী উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।তাই চলুন এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একেবারে মনোযোগ সহকারে পড়ি।কেননা!
সেই সাথে আমরা পুষ্টিকর খাদ্যভ্যাস, শরীর সুস্থ রাখতে আরো বিশেষ কিছু খাবার তালিকা এবং কি কি শারিরীক ব্যায়াম করবেন তার বিস্তারিত পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করবো।তাই চলুন জেনে আসি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কার্যকরী উপায় সম্পর্কে। আশা করি আপনি উপকৃত হবেন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কার্যকরী উপায়
ভূমিকা: শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কার্যকরী উপায়
কথায় আছে “সুস্থ দেহ সুস্থ্য মন”। দেহ এবং মন একে অপরের সাথে ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত। মন ভালো না থাকলে যেমন কিছুই ভালো লাগে না তেমন শরীর ভালো না থাকলে মনও ভালো থাকে না। খেয়াল করে দেখবেন যখন আপনার শরীর দূর্বল লাগে তখন কিছু করতেও ভালো লাগে না এবং কিছু খেতেও ইচ্ছে হয় না।
দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণেই আমরা এমন অসুখে ভুগী। তাই চলুন কিভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যায় তার কিছু কার্যকরী উপায় জেনে নেই।
পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস
রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা যাকে ইংরেজিতে বলে “ইমিউন সিস্টেম”। দেহের এই ইমিউন সিস্টেমকে বাড়াতে পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস অনস্বীকার্য। নিয়মিত খাবার তালিকায় নিম্নোক্ত খাবার গুলো রাখলে দেহের ইমিউন সিস্টেম বাড়ানো সম্ভব।
সাইট্রাস ফল: ভিটামিন সি, ভিটামিন বি, পটাশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম ও কপার ইত্যাদি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফল কে সাইট্রাস ফল বলে। যেমন: লেবু, কমলা লেবু ও আঙ্গুর। সাইট্রাস ফলে যেসব পুষ্টিগুণ রয়েছে তা হলো:-
- সাইট্রাস ফলের কার্যকরি উপাদান সমূহ দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
- সাইট্রাস ফলে থাকে উচ্চ মানের ফাইবার যা দেহের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- আপনি যদি কম ক্যালোরি যুক্ত খাবার খেতে চান, সাইট্রাস ফল খাদ্য তালিকায় রাখুন। সাইট্রাস ফলের এ গুণ শরীরের মেদ কমাতে কার্যকরী।
- পটাশিয়াম যুক্ত সাইট্রাস ফল কিডনিতে পাথর হওয়া রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, সাইট্রাস ফলে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
নিয়মিত সাইট্রাস ফল খাদ্য তালিকায় রাখলে হৃদরোগ ও স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।
সবুজ শাকসবজি
নিয়মিত খাদ্য তালিকায় সবুজ শাকসবজি রাখা আবশ্যক। ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম , বিটা ক্যারোটিন ইত্যাদি পুষ্টি গুণ সমৃদ্ধ সবুজ শাকসবজি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি করে।
সবুজ শাক-সবজির ভেতর রয়েছে পালং শাক, লাল শাক, পুঁইশাক ইত্যাদি। এই শাক-সবজিগুলো প্রচুর পুষ্টি সমৃদ্ধ যা দেহের রক্তকণিকা বৃদ্ধি, চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি, হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ভাবে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
রসুন
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে এক কোয়া রসুন মধু দিয়ে খেয়ে নিতে পারেন। অথবা দিনের যেকোনো সময় অন্তত এক কোয়া রসুন খান কারণ এটি স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। রসুন হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে খুবই কার্যকর উপাদান। এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে স্ট্রং করে।
গ্ৰিন-টি
গ্ৰিন-টিতে এন্টি-ভাইরাল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এর ভেতর ফ্ল্যাভোনয়েড এবং ইসিজিসি এর উল্লেখ যোগ্য ঘনত্ব পাওয়া যায়, যা দুই ধরনের চমৎকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এছাড়া গ্রিন টির কার্যকারী উপাদান দেহের ত্বক সতেজ এবং উজ্জ্বল করে।
সূর্যমুখী বীজ
ভিটামিন-বি6, ভিটামিন-ই, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম এবং সেলেনিউম ইত্যাদি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার হলো সূর্যমুখী। এসব গুনাগুণ ক্ষতিকর ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং দেহের ইমিউন সিস্টেম স্ট্রং রাখে।
কাজু বাদাম
কাজু বাদামে ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফাইবারসহ বিভিন্ন উপকারী উপাদান রয়েছে। এর স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও ভিটামিন-ই ইমিউন সিস্টেমকে সমৃদ্ধকরণের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। আপনি নিয়মিত সকালের নাস্তায় কিছু পরিমাণ বাদাম রাখতে পারেন। অথবা কাজু বাদাম, চিনা বাদাম রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে উঠে খেতে পারেন। এটি আপনার শরীরের দূর্বলতা দূর করবে।
কিসমিস
কাজু বাদাম, চিনা বাদাম রাতে ভিজিয়ে রাখার সাথে সাথে কিসমিস ও ভিজিয়ে রাখুন। সকালে উঠে সবকিছু খেয়ে নিন খালি পেটে। এতে আপনার দূর্বল ভাব চলে যাবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
দই
দই ল্যাক্টিক অ্যাসিড ও ভিটামিন ডি এর চমৎকার একটি উৎস। এর কার্যকরী উপাদান দেহের অভ্যন্তরীণ ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।
পর্যাপ্ত পানি পান
শরীরকে সুস্থ এবং বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করতে হলে নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। পানি শরীরের অভ্যন্তরীণ ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এবং ক্ষতিকর বিভিন্ন উপাদান শরীর থেকে বের করে ফেলে। শরীর সুস্থ রাখতে আমাদের নিয়মিত ২-৩ লিটার পানি পান করা উচিৎ।
শরীর সুস্থ রাখতে আরও কিছু খাবার
শরীর সুস্থ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে নিয়মিত খাদ্যাভ্যাসে সবুজ শাকসবজি এবং ফলমূলের পাশাপাশি ডিম, দুধ, কিসমিস, ছোলা, মৌসুমী ফল ও শাকসবজি রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে একটি সুন্দর খাদ্যাভ্যাস শরীরকে সুস্থ রাখে। খাদ্য তালিকায় আরও রাখতে হবে আমিষ, শর্করা ও স্নেহ জাতীয় খাবার। পুষ্টিকর খাবার পেতে ভিজিট করুন এই ওয়েবসাইট টি। Click here
নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম
নিয়মিত শরীর চর্চা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করলে যা হয়:-
- ব্যায়াম করার সময় হৃদপিণ্ড দ্রুততর হয়ে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে।
- ব্যায়াম মাংসপেশি ও হাড়কে মজবুত করে এবং শরীরকে শক্তিশালী রাখে। এটি আর্থ্রাইটিস এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমায়।
- ব্যায়াম ক্যালোরি বার্ন করে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
- শারীরিক ব্যায়াম এন্ডর্ফিন হরমোন নিঃসরণ করে, যা মানসিক চাপ কমায় এবং মন ভালো রাখে।
- নিয়মিত ব্যায়াম শরীরের শক্তি ও স্ট্যামিনা বাড়ায়, ফলে দৈনন্দিন কাজকর্মে ক্লান্তি কম হয়।
- নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং বিভিন্ন সংক্রমণ ও অসুস্থতার ঝুঁকি কমায়।
- তাই শরীরকে ফিট এবং কর্মক্ষম রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিৎ।
শারীরিক ব্যায়ামের পদ্ধতি
নিচে শারীরিক ব্যায়ামের কিছু পদ্ধতি বর্ননা করা হলো।
- প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট জগিং করুন।
- ইয়োগা করুন।
- সাইক্লিং করুন।
- দ্রুত হাঁটুন।
- ভারোত্তোলন করুন।
- অ্যারোবিক ব্যায়াম করুন।
- প্ল্যাঙ্ক ও পুশ-আপস করুন।
ইয়োগা করলে শরীরের নমনীয়তা বৃদ্ধি পায়। সাইক্লিং ক্যালরি বার্ন করে। দ্রুত হাটলে স্ট্যামিনা বাড়ে। অ্যারোবিক ব্যায়াম যেমন নাচ, জুম্বা বা কার্ডিও ব্যায়াম শরীরের সহনশীলতা বাড়ায় এবং স্বাস্থ্য বজায় রাখে। এজন্য নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করতে হলে প্রতিদিন ৩০-৪৫ মিনিট সময় বরাদ্দ করুন। এটি শুধুমাত্র শরীরের জন্যই নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও অপরিহার্য।
মানসিক স্বাস্থ্য ও বিশ্রাম
মানসিক স্বাস্থ্য এবং বিশ্রাম আমাদের সার্বিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং নানা সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়।মানসিক চাপ কমানোর জন্য নিয়মিত মেডিটেশন এবং যোগব্যায়াম করা অত্যন্ত উপকারী। দৈনন্দিন মেডিটেশন মানসিক শান্তি প্রদান করে এবং স্ট্রেস হরমোন কমায়।
পরিবারের সদস্য, বন্ধু ও প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটানো মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক। এছাড়া, সামাজিক সম্পর্ক আমাদের মানসিক শক্তি যোগায় এবং সৃজনশীল কার্যক্রম যেমন গান শোনা, ছবি আঁকা, কিংবা বই পড়া আমাদের মনকে শান্ত রাখে।ঘুম বিশ্রামের সবচেয়ে ভালো একটি উদাহরণ। তাই ব্রেনকে রেজ্যুভিনেট করতে আমাদের নিয়মিত ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানো উচিত।
স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা বজায় রাখা
স্বাস্থ্যকর জীবন যাত্রা বজায় রাখতে আমাদের কিছু বিষয় নিয়ম মাফিক করতে হবে। যেমন:- পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ, অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম, ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানো, সঠিক হাইজিন মেনে চলা, প্রতিদিন ২-৩ লিটার পানি পান করা, দেহের ওওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা, ধুমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করা ইত্যাদি।
উপসংহার
শরীর এবং মন সব যান্ত্রিকতার উর্ধ্বে। তাই শরীর এবং মন ভালো রাখতে প্রকৃতির কাছাকাছি থাকুন। এজন্য খালি পায়ে হাঁটতে পারেন সবুজ ঘাসের উপর কিছু সময়। এছাড়াও, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ শরীরের ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করে। তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে উপরিউক্ত নিয়মগুলো মেনে চলুন এবং আমাদের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ!
বিঃদ্রঃ এই পোস্টটি mrhelpbook.com আইটি গেস্ট পোস্ট হিসেবে পোস্ট করায় 900 টাকা পেমেন্ট নিয়ছি।
মিঃ হেল্প বুক ওয়েবসাইটে ; নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url